জ্ঞানপিপাসু হিসেবে চায়না আপনাকে নতুন জ্ঞ্যানের সীমারেখা অতিক্রম করতে সর্বোচ্চ ভাবে সাহায্য করবে কারন, চায়নাতে রয়েছে জ্ঞ্যানের ভান্ডার। নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় চায়নাতে প্রতিদিন…
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা:
চীনে ৩-৬ বছর থেকেই শিশুদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় যা শিশু শিক্ষা বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্গত। চীনে শিশু শিক্ষা প্রধানত কিন্ডারগার্টেন বা পূর্ব স্কুল ক্লাসে চালিত হয়।বড় ও মাঝারি আকারের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত শহরগুলোতে কিন্ডারগার্টেনগুলো সাধারণত বাচ্চাদের প্রাক্-বিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে থাকে। এদের অধিকাংশই বেসরকারি খাতে পরিচালিত। প্রশ্ন হতে পারে, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আসলে কি শিখানো হয়, এর উদ্দেশ্য কি? প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিশুদের শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলা, মূল শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টিতে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। চীনের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্বনির্ভরতার শিক্ষা দেওয়া হয়। যেমন নিজে নিজে খাওয়া, নিজে নিজে কাপড় পরিধান করা, নিজের বইপত্র ও খেলনা গুছিয়ে রাখা, সহপাঠীদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলা, ক্লাসরুমের আচরণসমূহ ইত্যাদি। এক্সট্রা কারিকুলার হিসেবে থাকে নাচ, গান, ছবি আঁকা, খেলাধুলা ইত্যাদি। বর্তমানে চীনে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন আছে।শিশুদের ভর্তির হার প্রায় ৪৫ শতাংশ।
প্রাথমিক শিক্ষা :
চীনের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা ৬ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার মেয়াদ ছয় বছর । প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাধারণত স্থানীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে কিছু কিছু আবার ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। চীনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অবকাঠামো দিক দিয়েও অনেক সমৃদ্ধ। প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলেই বড় খেলার মাঠ থাকে। শারীরিক শিক্ষা, গণিতের বহুমুখী ব্যবহার ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে এখান থেকেই লাভ করে। এছাড়াও বছর মেয়াদ প্রধান কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে চীনা ভাষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, বিদেশী ভাষা, নৈতিক আচরণ, সংগীত, ক্রিড়া ইত্যাদি পড়ানো হয়। সররপরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে ৪ লক্ষেরও বেশি প্রাথমিক স্কুল আছে, ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ১২ কোটি।
মাধ্যমিক শিক্ষা :
সাধারণত ১২-১৭ বছর বয়সীরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে। দেশে রয়েছে প্রায় ১ লাখ মাধ্যমিক বিদ্যালয় , যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি । চীনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আবার বিভিন্নভাগে ভাগ করা হয়। যেমন – সাধারণ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, পেশাগত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, প্রযুক্তিগত মাধ্যমিক স্কুল ইত্যাদি। আবার ‘সাধারণ মাধ্যমিক’ বিদ্যালয়গুলোকে জুনিয়র হাইস্কুল এবং উচ্চবিদ্যালয়ে বিভক্ত করা হয়, যার প্রতিটিতে তিন বছর করে স্কুল–ব্যবস্থা রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো সাধারণত স্থানীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। চীনের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার করে। এটার অন্যতম কারণ হলো গাও কাও (Gao Kao) বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। দেশব্যাপী এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বলা যায়,পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে একটি। হিমালয় সমান সাহস নিয়ে চীনা শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারা চেষ্টা করে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে। চলতি বছর প্রায় ৯০ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষা :
বিশ্বের টপ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে চীনের ৮টি (হংকং ৪) বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এশিয়ার প্রথম ৫০০টির মাঝে শুধু চীনেরই ৮১টি বিশ্ববিদ্যালয় (জাপান ১১০)। এই পরিসংখ্যানটি লক্ষ করলেই বোঝা যায় চীনের উচ্চ শিক্ষার মান কতটুকু সমৃদ্ধ। চীনে ৩ হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, এর মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ হচ্ছে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, অন্য সব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিখ্যাত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সবই সরকারী প্রতিষ্ঠান। এখন এগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার জন্য ভর্তি পরিক্ষায় পাস করতে হয়। শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও চীনা শিক্ষার্থীরা খুব ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে। অনার্স চতুর্থ বছর থেকেই থিসিস, ইন্টার্ন সম্পন্ন করে। মাস্টার্সে ভর্তির জন্য পুনরায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। সেখানেও তারা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিয় সুযোগ পেয়ে থাকে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূলত গুনগত ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানের উপর জোর দেওয়া হয়।
জ্ঞানপিপাসু হিসেবে চায়না তে যদি পড়তে যেতে চান তাহলে উপরের বিষয়গুলো আপনাকে চায়না সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা দিবে বলে আশা করি। আরও পড়ুনঃ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কোথায় যাবেন? ইওরোপ নাকি চায়না?
বাসা সাজাতে দারুন জিনিসঃ Canvaswala
Leave a Reply