যখন যেকোনো বিষয়ে মার্কেটিংয়ের পরিকল্পনা শুরু করবেন, তখন ১ম পরিকল্পনা করবেন কীভাবে সেলস ফানেল টি তৈরি করবেন।
সেলস ফানেল কী?
যেকোনো কিছুর মার্কেটিং প্ল্যান করলে, সম্ভাব্য লিডগুলোকে (ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্রেতাকে) বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিভিন্ন উপায়ে কালেক্ট করে, নিজের কন্ট্রোলে কোনো জায়গাতে স্টোর করতে হয়। তারপর সেগুলোকে নার্সিং করতে হয়। এগুলো নার্সিং করার কারণে সেগুলো সেলে কনর্ভাট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেলসের জন্য এই ৩ ধাপে পরিকল্পনা করে ফাইনাল রেজাল্ট নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটাকে প্ল্যানমাফিক সাজানোকেই সেলস ফানেল বলে।
সেলস ফানেল ছাড়া কি মার্কেটিং করা সম্ভব নয়?
ভালো মার্কেটাররা সকল সময়ই মার্কেটিং পরিকল্পনার সময় সেলস ফানেল ডিজাইন করে। তাতে সেলগ্রোথ সবসময় ঠিক থাকে, একটা পর্যায়ে পরিশ্রম কমে যায়, কিন্তু সেল বেশি হয়।
তবে অনেকেই মার্কেটিংয়ের বিশদ না জেনেই মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন টুলসে (সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং, বøগ মার্কেটিং ইত্যাদি) এক্সপার্ট হওয়ার কারণে তাদের মার্কেটিং পরিকল্পনাতে সেলস ফানেল ডিজাইনের চিন্তা মাথাতেই থাকে না। কিন্তু এরপরও ইনকামের দিক দিয়ে সফল হচ্ছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, সেলস ফানেল ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেলস ফানেল ছাড়াও মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব দেখে নিই :
◉- যেসব সার্ভিস বা প্রোডাক্টের জন্য খরচ করতে মানুষ খুব বেশি চিন্তা করে না, অর্থাৎ খুব সহজেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনতে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে সেলস ফানেল ছাড়াও সফল হওয়া যায়। যেমন : সিগারেট, টি-শার্ট, চাল, ডাল, কলম, ইত্যাদি বিভিন্ন দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিস এবং কম দামি প্রোডাক্ট।
◉ – সময়ের চাহিদাসম্পন্ন হলে সেক্ষেত্রে সেলস ফানেল দরকার হয় না। যেমন : এ মুহূর্তে আমের চাহিদা অনেক বেশি। তাহলে এটি বিক্রি করতে সেলস ফানেলের দরকার নাই।
◉ – যে বাজারে বিক্রি করবেন, সেই বাজারে খুব জনপ্রিয় ব্রান্ড এটি। সেক্ষেত্রে সেলস ফানেল ছাড়াই ভালো বিক্রি হবে। অর্থাৎ আড়ং এর পণ্য বিক্রি করবেন। তাহলে শুধু টার্গেট ঠিক করে বুস্ট করলেই সেল পেয়ে যাবেন।
◉ – একদম যারা ১০০% কিনবে, সেই লিস্ট কারও কাছ থেকে পেয়ে গেছেন, সেক্ষেত্রে সেলস ফানেল দরকার নাই।
এসব ক্ষেত্রে সেলস ফানেল ছাড়াও সফল হলেও বড় বড় মার্কেটাররা এসব ক্ষেত্রেও সেলস ফানেল তৈরি করেন। কারণ লংটাইম সফলভাবে কাজ করতে চাইলে সেলস ফানেল ডিজাইন করে কাজ করলে সফলতা অনেক বেশি পাওয়া যায়।
কোন কোন ক্ষেত্রে সেলস ফানেল ছাড়া মার্কেটিং করাই উচিত না?
◉- কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডিংয়ের জন্য মার্কেটিং করলে।
◉- যেসব সেবা বা প্রোডাক্ট কেনার ব্যাপারে খুব সহজে কেউ সিদ্ধান্ত নেয় না।
◉ – যার কাছে বিক্রি করবেন, তার জন্য এটি যদি ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
◉ – যেটি জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ না, পছন্দের কারণে কিনতে পারে।
◉- একদমই নতুন প্রতিষ্ঠান হলে সেক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস বা পণ্য বিক্রির মার্কেটিংয়ে
◉ – পণ্য বা সার্ভিসটির ব্যাপারে বাজারে নেগেটিভ ধারণা থাকলে, সেটির মার্কেটিংয়ে
◉ – যে বাজারে বিক্রি করবেন, সেখানে কম্পিটিশন খুব বেশি থাকলে
◉- যে সার্ভিসটি বাজারে তুলনামূলক কম মূল্যে অন্য কেউ বিক্রি করছে, সেই বাজারে
এ পয়েন্টটিতে একটি কথা বলে পয়েন্ট শেষ করে দিচ্ছি। যেকোনো কিছুর মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে মাথাতে রাখতে হবে। আপনার সম্ভাব্য বাজারে ৩ শ্রেণির সম্ভাব্য ক্রেতা রয়েছে।
১ম শ্রেণি:
সেবা বা পণ্যটি লাগবেই। সে শুধু খুঁজতেছে, কে সেই সেবাটি সেল করে। কে সেল করে খুজে পেলেই তার কাছ থেকে পণ্যটি বা সার্ভিসটি কিনে নিতে প্রস্তুত। প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন তার চোখে পৌছাতে পারলেই নিশ্চিত সেল পেয়ে যাবেন।
বাজারে এ শ্রেণি সর্বোচ্চ ১০%
২য় শ্রেণি : এ ধরনের কিছু লাগবে। কিন্তু আসলে সে নিজে এখনও পুরোপুরি কনফার্ম না, আসলে সে কী খুঁজছে? সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, লোভনীয় বিজ্ঞাপন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে আস্থা তৈরি করাতে পারলে এ শ্রেণিকে ক্রেতাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
বাজারে এ শ্রেণি সর্বোচ্চ ৩০%
৩য় শ্রেণি : এ শ্রেণিতে ফেলব তিন ধরনের মানুষকে :
ক. যাদের এ সার্ভিস কিংবা পণ্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই।
খ. যারা সার্ভিসটি সম্পর্কে জানে কিন্তুএকবিন্দুও কেনার আগ্রহ নাই
গ. যাদের এ সার্ভিস বা প্রোডাক্টটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নেগেটিভ ধারণা রয়েছে।
এ শ্রেণির মানুষদের ক্রেতাতে রূপান্তরিত করতে অনেক পরিকল্পিত সেলস ফানেল ডিজাইন করতে হয়। সেলস ফানেল তৈরি ছাড়া এ শ্রেণির মানুষদের কখনও ক্রেতাতে কনভার্ট করতে পারবেন না।
বাজারে এ শ্রেণি ৬০%
যেকোনো মার্কেটিং প্ল্যানিংয়ের সময় উপরের রেসিওটা মনে রেখেই মার্কেটিং পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কোনো শ্রেণিকে কীভাবে টাচ করবেন, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণির জন্য আলাদা কনটেন্ট প্লানিং থাকতে হবে। তাহলেই সেল বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে আপনি আপনার বিজনেসের জন্য সেলস ফানেল তৈরি করবেন?
বিজনেসের ধরন বা প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর প্রকারভেদে সেলস ফানেল ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি একজন দক্ষ বিজনেস কনসালট্যান্ট এর পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য আদর্শ সেলস ফানেল তৈরি করতে পারেন। উদাহরন স্বরূপ একটি ই-কমার্স কোম্পানি ফ্যাশন আইটেম সেলস ফানেল তৈরি করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
Step 1
১ম ধাপে ড্রেস নিয়ে খুত খুতে স্বভাবের একজনের আচরণটাকে কল্পনা করেন। তাহলে সঠিকভাবে কনটেন্ট প্লান নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন। এই টাইপ মানুষেরা ড্রেস নিয়ে কোন কোন টপিকসের কনটেন্টগুলোতে বেশি অ্যাংগেজ হতে পারে, তা অ্যানালাইস করে খুজে বের করুন, এবং সে বিষয়গুলোকে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করুন। ইমেজ কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট, ব্লগ কনটেন্ট সব ধরনের কনটেন্টের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
Step 2
Step 1 এ আপনার অ্যাক্টিভিটিসের মাধ্যমে কাস্টমার যখন আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে জানবে, আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস গুলো নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তখন ল্যান্ডিং পেজ এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস সম্পর্কে ডিটেলস তথ্য কাস্টমারদের প্রদান করবেন। আগ্রহী কাস্টমারদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত ইনফর্মেশন সংগ্রহ করবেন। এটাকে লিড জেনারেশন বলা হয়।
Step 3
কাস্টমার ল্যান্ডিং পেইজ ভিজিট করে আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস গুলো দেখেছে কিন্তু এখনও কেনাকাটা সম্পন্ন করে নাই। সে আপনার কথা ভুলে যাবে।তাই এই ধাপে তাদের যে ডাটা পিক্সেলে সংরক্ষিত হয়েছে, রিটার্গেট অ্যাডস রান করে বিভিন্ন অফারগুলো তাদের চোখের সামনে বার বার নিয়ে এসে আপনার ব্র্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দিন। এবার দেখেন সেলস কত বেড়ে যায়।
সেলস ফানেল এর সফলতা নির্ণয় করবেন কিভাবে?
সেলস ফানেল এর চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা নির্ণয় করা প্রয়োজন। তা না হলে আপনার সেলস ফানেল টি কার্যকর কিনা সে সম্পর্কে কখনোই বুঝতে পারবেন না।
দেখে নেই কিভাবে বুঝবেন আপনার সেলস ফানেলটি কার্যকর নাকি আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।
Awareness বা অনুধাবন ধাপ
একটি ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য থাকে কাস্টমারদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা। এ ক্ষেত্রে সফলতা নির্ণয় করতে হয় আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলো সর্বাধিক কতজন টার্গেট অডিয়েন্সকে রিচ করতে পারছে। যদি দেখেন পোটেনশিয়াল অডিয়েন্স সাইজ ১০ লাখ। কিন্তু মাত্র তিন লক্ষ মানুষকে আপনার অ্যাড গুলো দেখাছে, তবে ফানেল অপটিমাইজ করা প্রয়োজন।
Interest বা আগ্রহ ধাপ
এই স্টেজের সফলতার নির্ণয় করতে হয় কাস্টমার আপনার দেয়া তথ্য গুলোর উপরে আস্থা রাখতে পারছে কিনা তার ওপরে। এটি বুঝবেন যখন তারা আপনার কনটেন্ট গুলার সাথে লাইক, শেয়ার বা কমেন্টের মাধ্যমে যুক্ত হয়। যদি কাস্টমার কম এঙ্গেজ হয় অথবা নেগেটিভ কমেন্ট করে। তাহলে আপনার সেলস ফানেল ঘষামাজা করা প্রয়োজন।
Desire বা আকাঙ্ক্ষা ধাপ
আপনি বিভিন্ন ধরনের অফার এবং ডিসকাউন্ট প্রদান করছেন। তার মধ্যে কতজন কাস্টমার সেই অফার বা ডিসকাউন্ট ব্যবহার করছে, সেটির পরিমাণে বলে দেয় স্টেজে ফানেল কতোটা সফল। প্রমোশনাল অফারের বিপরীতে প্রাপ্ত কাস্টমার অর্ডার সংখ্যায় আকাঙ্ক্ষা স্টেজের সফলতার নির্ণায়ক।
Action বা পদক্ষেপ ধাপ
কেনাকাটা সম্পূর্ণ করার জন্য কাস্টমার আপনার কল টু অ্যাকশন গুলার সাথে কিভাবে যুক্ত হচ্ছে সেটি এই স্টেজের সফলতা নির্ণয় করে। যদি লক্ষ্য করেন আপনার প্রোডাক্ট ওঁ সার্ভিসের অ্যাডের সাথে থাকা কল টু অ্যাকশনে কাস্টমার খুব বেশি যুক্ত হচ্ছে না তবে অপটিমাইজেশন প্রয়োজন।
পরিশেষে
বর্তমান সময়ে কেনাকাটায় কাস্টমারদের সামনে প্রচুর অপশন রয়েছে। তাই আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য তাদের না দেন তবে তারা আপনাকে কখনোই মূল্যায়ন করবে না।ঠিক এ কারণেই বেশিরভাগ অনলাইন বা অফলাইন বেচাকেনায় একটি ব্র্যান্ডের সমস্ত মার্কেটিং প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
শুধুমাত্র পরিকল্পিত ফানেল তৈরি করে কাস্টমারদের সঠিক সময়ে, সঠিক তথ্য গুলো সুসজ্জিত ভাবে সরবরাহ করলেই একজন কাস্টমারকে তা কেনার সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দেয়।
পরিকল্পনাহীন মার্কেটিং এর পেছনে লক্ষ টাকা ব্যয় করলেও সেখানে থেকে আপনি পরিমিত সেল পাবেন না এবং এই সত্যটি আপনাকে সবার প্রথমে জানতে হবে।
একবার ভাবুন তো, আপনি যখন বিজনেসের জন্য একটি অ্যাড দেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন আপনি কি চিন্তা করেছেন সেই অ্যাড সেলস ফানেলের কোন স্টেজের জন্য ডিজাইন করছেন? এবং আপনি সেখান থেকে কি লক্ষ্য অর্জন করতে চান?
কপিরাইটঃ StoreX
আরও পড়ুনঃ টেকনোলজি: ২০২৪ সালে কী কী অপেক্ষা করছে?
ডিজাইন ও ওয়েবসাইট সার্ভিসঃ Fixcave Agency
1 Comment