সারাদিন এনার্জি

রমজানে সারাদিন এনার্জি পেতে ৪ টি গোপন টিপস

By Adivai_Admin March 22, 2024 No Comments 3 Min Read

রমজানে সারাদিন এনার্জি পেতে আমরা কত কিছুই না করি। তবে এই রমজানের সারাদিন যেন আপনার অনেক এনার্জি থাকে, সেই জন্য কোন ধরনের খাবার খাবেন কেমন রুটিন ফলো করতে পারেন, এই আর্টিকেলে সেটা নিয়ে কথা বলবো।

Image: Freepik
ইফতারিতে কি খাবেন?

শুরু করছি ইফতার দিয়ে। আমরা অনেকেই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করি এটা খুবই ভালো। কিন্তু সাথে আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন। যাতে খেজুর টা খেতে আরো অনেক মজা হবে পুষ্টিও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। খেজুরের আটিটা বের করে সেখানে একটা কাঠবাদাম ঢুকিয়ে দিবেন।

বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর ১০০ খাবারের তালিকার মধ্যে গবেষণায় এক নাম্বারে কিন্তু কাঠবাদাম রয়েছে। যদি কাঠ বাদাম হাতের কাছে না থাকে তাহলে আপনি অন্য কোন বাদাম নিয়েও এটা করতে পারেন। তাহলে খুবই স্বাস্থ্যকর একটা স্টার্ট হলো। এতে করে সারাদিন এনার্জি শেষে সুন্দর একটা শুরু করলেন।

এরপর অবশ্য অনেকেই একটা কাজ করেন যেটা স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ভালো না, সেটা হলো চিনির শরবত বা চিনি দিয়ে বানানো জুস খাওয়া। আপনি পানি খেতে পারেন আর যাদের সুযোগ আছে তারা ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে যেটা আপনার সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। কেন আমি চিনি দিয়ে বানিয়ে খাওয়া শরবত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি?

আমাদের শরীরে আলাদা করে চিনি খাওয়ার কোন প্রয়োজন বা উপকারিতা নেই। বরং অতিরিক্ত চিনি খেলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। খেজুর আর পানি খাওয়ার পরে আপনি কিছু ফলমূল খেতে পারেন। যে ধরনের ফলমূল আপনার জন্য সহজলভ্য সেটাই খেতে পারেন।

যেমনঃ কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, আপেল, কমলা, যেইটা আপনার ভালো লাগে। নানান ধরনের ফলমূলে নানান রকমের পুষ্টি থাকে তাই পরিবর্তন করে করে পুরো রোজার মাস ধরে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে এতক্ষনে গেলো তিনটা খাবার খেজুর, পানি আর ফল।

Image: Freepik

ইফতারিতে যেসব খাবার আপনাকে কষ্ট দেয়ঃ

অনেকেই এই সময় পেঁয়াজু, বেগুনি, বড়া এসব খাবার খান। এই খাবারগুলো ডুবো তেলে ভাজা যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই খাবারগুলোতে অনেক পরিমানে ট্র্যান্সফ্যাট থাকতে পারে। ট্র্যান্সফ্যাট হচ্ছে সবচেয়ে বিপজ্জনক এক ধরনের ফ্যাট। এই ধরনের ফ্যাট অল্প পরিমাণে খেলেও শরীরে অনেক বড় ক্ষতি করে।

গবেষনায় দেখা গেছে আপনি দিনে যেই পরিমান ক্যালরী খান তার মাত্র ২ শতাংশে যদি ট্রান্সফ্যাট থেকে আসে তাহলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে ২৩ শতাংশ। এছাড়া ট্রান্সফ্যাট ইনসুলিন রেজিস্টেন্স তৈরি করতে পারে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, শরীরের প্রদাহ তৈরি করতে পারে। মোটকথা আপনি সারাদিন রোজা রেখে এত কষ্টের পরে এই খাবারগুলো খেয়ে নিজের ক্ষতি না করাই উত্তম। জিলাপি বুন্দিয়া এসবও তেলে ভাজা ও চিনি দেওয়া তাই এসব খাবারও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।

তাহলে আপনি খেজুর, পানি এবং ফলমূল খেলেন। আগেই আপনি আর কিছু না খেয়ে একটা বিরতি দিলে ভালো। অনেকেই এই সময় নামাজ পড়েন, একটু হাটেন। এই বিরতি দেওয়াটা খুবই ভালো জিনিস। কেন বলছি? সারাদিন উপবাসের পরেই যে আপনার খাবার পেটে গেল সেইটা ব্রেনের বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। রোজার সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া খুবই একটা কমন সমস্যা।

এ কারণে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়, আবার অনেকের ওজন বেড়ে যায়। যারা রোজার সময় ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এই বিরতি নেওয়াটা খুবই কাজে দেবে। এতে করে সারাদিন এনার্জি পাওয়ার পাশাপাশি আপনি রোগমুক্ত থাকবেন।

Image: Freepik

সঠিক নিয়মে খাবার গ্রহন ও পরামর্শঃ

তাহলে তিনটা খাবারের পর আপনি একটু ব্রেকে গেলেন, নামাজ পড়লেন বা একটু হেটে আসলেন তারপরে কি খাবেন? এই সময় আপনার প্লেটটা মনে মনে চারভাগে ভাগ করবেন। অর্ধেক প্লেট জুড়ে নিবেন সবজি ও ফলমূল, বাকি যে অর্ধেক সেটার অর্ধেক অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগে আপনি নিবেন লাল চাল বা ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত অথবা লাল আটার রুটি। আর বাকি অংশে নিবেন ডিম, মাছ, মাংস, ডাল বা ছোলা অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার।

এই যে আপনি প্লেটের হিসাব করছেন এই সময় ফল প্লেটে নিয়ে তরকারীর সাথে মাখাতে হবে না। আপনি ফলটা আলাদা প্লেটে রাখবেন শুধু আপনি মনে মনে হিসাব করবেন যে ফল আর সবজি মিলিয়ে প্লেটের অর্ধেক হয়েছে কিনা। ইফতারিতে আপনি যে ফল খেলেন সেটাও এখানে মনে মনে ধরবেন। এতে করে সারাদিন এনার্জি পাবেন সঠিক ভাবে।

এখানে একটা জিনিস বিশেষভাবে বলতে চাই অনেকেই মনে করেন যে সারাদিন রোজা রাখার পরে বড় একটা খাওয়া দিতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ভোজন অস্বস্তির কারণ হতে পারে, ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমি যেভাবে বললাম সেভাবে যদি আপনি সবজি, লাল চালের ভাত, মাছ, মাংস খান তাহলে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর শক্তি আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন।

Image: Freepik

পানিশূন্যতার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরী

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলি সেটা হল পানিশূন্যতা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন পানির দিকে যদি আপনি খেয়াল না রাখেন তাহলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ গ্লাস বা আড়াই লিটার পানি খাবেন। ইফতার আর সেহেরিতে তো আপনি পানি খাবেন ই মাঝের সময়টাতে আপনি মনে করে পানি খেতে থাকবেন। তারাবি নামাজের সময় সাথে একটা পানির বোতল রাখতে পারেন।

নামাজের আগে পরে পানি খেলেন। আর তারাবী যেহেতু একটু লম্বা সময়ের নামাজ তাই পানির পাশাপাশি পানি জাতীয় খাবার যেমন তরমুজ খেতে পারেন, শশা, টমেটো এগুলো খেতে পারেন, একটু সালাদ করে খেতে পারেন। ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন যেন শরীরের পানি শূন্য তৈরি না হয় কারণ পানিশুন্যতা থেকে অনেক প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হতে পারে। সারাদিন এনার্জি পেতে পানিশূন্যতা রোধের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনঃ কম খরচে থাইল্যান্ড ভ্রমণ এর 5 টি টিপস

Image: Freepik

সেহরীতে যা খাবেন, যা খাবেন নাঃ

এখন আসছি সেহরিতে কি খাবেন? সেহরিতে এমন খাবার আমাদেরকে বেছে নিতে হবে যেটা অনেক্ষন পেটে থাকে। যে খাবারগুলোতে ফাইবার বেশি এমন ধরনের খাবার খেতে হবে। এতেকরে দিনে আমরা অল্প অল্প করে বেশি সময় পর্যন্ত এনার্জি পাবো। সাদা চালের ভাত খেয়ে সেটা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।

অনেক সময় ধরে এনার্জি দিতে পারে না। একটু পরেই দেখা যায় যে ক্ষুধা লেগে যায়। তাই সেহরীর জন্য ভালো খাবার হলো লাল চালের ভাত। ভাত দিয়ে আপনি ঘন ডাল খেতে পারেন, সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন, ওটস খেতে পারেন। চিয়া সিডের শরবত বা পুডিং খেতে পারেন সাথে বাদাম খেতে পারেন। বাদামে ভালো ফ্যাট থাকে হজম হতে সময় লাগে পেটে অনেক সময় ধরে থাকে।

এই খাবারগুলোতে মধ্যে কোন খাবারে যদি আপনার গলা বুক জ্বলে তাহলে সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। যারা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন তারা সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না। খাটের কোনায় মাথাটা একটু উপরে তুলে শোবেন যাতে করে পেট থেকে মাথাটা একটু উপরের দিকে থাকে। এতে করে আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার সমস্যা দূর হবে ও সারাদিন এনার্জি পাবেন।

Image: Freepik

শরীর ঠিক রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেইঃ

আরেকটা বিষয় সেটা হলো ব্যায়াম। অনেকেই চিন্তা করেন যে রোজার মধ্যে ব্যায়াম করা যাবে না। এটা একদমই সঠিক না। রোজার মাসে নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কমপক্ষে আপনি সন্ধ্যার পর এমন একটা সময় বের করবেন যখন আপনি আধা ঘন্টা দ্রুত গতিতে হাটবেন। যাতে সবমিলিয়ে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টার ব্যায়াম হয়। যদি আপনি তার আগে ব্যায়াম করতে চান সেটাও করতে পারেন।

সকালে ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। মোটকথা সুস্থ থাকতে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। এই আর্টিকেলে আমি মোট চারটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। ইফতার, সেহরি, পানি শূন্যতা ঠেকানো আর ব্যায়াম। এই চারটা বিষয় যদি আপনি মনোযোগ দিতে পারেন, তাহলে আশা করছি আপনি সারাদিন এনার্জি পাবেন এবং একটা স্বাস্থ্যকর, এনার্জেটিক রমজান কাটবে আপনার। আপনার এবং আপনার পরিবারের সু-স্বাস্থ্য কামনা করছি।

আরও পড়ুনঃ লুকানো স্বর্গে দারুন অভিজ্ঞতা আমাকে বারবার টানে!

ঘর সাজাতেঃ Canvaswala || ব্যবসা সাজাতেঃ Fixcave

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *