গয়নার বাক্স: আমার বিয়ের জন্য যে পাত্র ঠিক হলো সে দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর। শুধু যে চেহারা সুন্দর তাই না তার নিজের একটা এজেন্সি আছে। প্রতি মাসে ছ’লাখ টাকা ইনকাম। বাবা বললেন এই ছেলে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। আত্মীয় স্বজন যারা ছিল তারাও একই কথা বলেছে। আমাদের বংশের কোন মেয়ের ভাগ্যে এমন ভালো বর জুটেনি! আমার এতো ভালো ভাগ্য নিয়ে সবাই আফশোস করতে লাগলো!
এরমধ্যে ছেলে আর তার মা একবার এলো। এসে আমায় দেখে গেল। ছেলের পছন্দ হয়েছে। ছেলের মায়েরও।মা তখন একটা চালাকি করলেন। এতো ভালো পাত্র যেন কোন ভাবেই হাত থেকে ফসকে যেতে না পারে এই জন্য তিনি তাড়াহুড়ো করলেন।ছেলের মাকে তিনি বললেন,’ মেয়েকে যেহেতু আপনাদের পছন্দ হয়েছে তাহলে রিং পরিয়ে যান।মেয়ের নানান জায়গা থেকেই বিয়ের আলাপ আসে।রিংটা পরা থাকলে আমরা একটু নিশ্চিন্ত থাকতাম। অন্য জায়গা থেকে আলাপ আসাও বন্ধ হয়ে যেতো।
ছেলের মা খুশি মনেই বললেন,’ কথা ঠিক বলেছেন বেয়াইন। মেয়ে যেহেতু আমার পছন্দ হয়েছে তাহলে একটা ফর্মালিটিজ করা দরকার। কিন্তু আংটি তো তৈরি করে নিয়ে আসিনি। আমার আঙুলে যে আংটি আছে এটাই আমার হবু বউমাকে পরিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।’
আমার হবু শাশুড়ি আমার হাতের আঙুলে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেলেন।আর বিয়ের ডেট ঠিক করে গেলেন। বিয়ে হবে পনেরো দিন পর।
আমাদের বাড়ির সবাই খুশিতে আত্মহারা। বাবা পাড়া জুড়ে মিষ্টি বিতরণ করলেন। কিন্তু এর ঠিক দু’দিন পর আমাদের মেজো ফুফু এসে বাঁধ সাধলেন। মাকে ধরে বললেন, ‘ভাবী, এই বিয়েটা ভেঙ্গে দেন।’ গয়নার বাক্স
মা অবাক হয়ে বললেন,’ কেন? বিয়ে ভেঙে দেব কেন?’
ফুফু বললেন,’ এরা লোক ভালো না। মারাত্মক লোভী লোক।’
মা বললেন,’ এরা যে মারাত্মক লোভী তা তুমি কি করে জানো?’
ফুফু বললেন,’ আমার খালা শাশুড়ি বলেছেন।উনি চিনেন ছেলের পরিবারের সকলকে।’
মা বললেন,’ এইসব আলাপ বাদ দেও। মানুষ কখনোই অন্য মানুষের ভালো দেখতে পারে না।
আমার মেয়ে ওই বাড়িতে বিয়ে হলে রাজরানী হয়ে থাকবে। নিজের চোখে দেখে নিও। আমি মানুষ চিনি। ছেলের চেহারা দেখেই বুঝেছি, এমন লক্ষ্মী ছেলে হয় না। ছেলের মাও মাটির মানুষ।কি ভালো আচরণ! ‘
ফুফু আর এ নিয়ে কথা বললেন না। শুধু বললেন, ‘আপনি যদি ভালো মনে করেন তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। বিয়ে দিন। আমার ভাতিজির ভালো ঘরে বিয়ে হলে তো আমার আনন্দ।’
বিয়ের সময় আমাদের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। ওরা এতো গহনা এনেছে যে এতো গহনা আমাদের কেউ কখনো চোখেও দেখেনি। তাছাড়া আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে ফোন করে বলেছে, তার একটা মাত্র ছেলে। তিনি বিয়ের পর আমার নামে শহরের জমি থেকে আট শতক জমি লিখে দিবেন।
বিয়ের দিন আমার মেজো ফুফুকে মা ইচ্ছে মতো লজ্জা দিলেন। বললেন, ‘তুমি তো বলছিলা ছেলের পরিবার লোভী, এখন নিজের চোখে দেখো লোভী কি না এরা! এই যে চোখ খুলে গহনা গুলো দেখো।জীবনে এতো গোল্ড দেখছো? আরে দূর থেকে দেখলে কি হবে।কাছে আসো। হাত দিয়ে দেখো।পরে বলবা এইসব গোল্ড না, নকল।’ হাসলেন মা।
কিন্তু মেজো ফুফু লজ্জায় কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন,’ ভাবী, আমি তো শুধু আমার খালা শাশুড়ির থেকে কথাটা শুনে এসে বলেছিলাম। আপনি আমায় কেন এভাবে লজ্জা দিচ্ছেন? জুঁই তো আমার ভাইয়ের মেয়ে। সে আমার রক্ত।আমি কি তার খারাপ চাইবো? মা ফুফুর এসব কথায় পাত্তা দিলেন না। দূরে সরে গেলেন।
বাবা তখন মাকে বলেছিলেন, ‘তুমি বেশি বেশি করছো। কোন কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করতে নেই।এর ফল খারাপ হয়!’ বাবার কথা শুনে মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়ে বললেন,’ খারাপ টা কি আবার? খারাপটা কি হবে শুনি? তোমার বোন একটা মিচকা শয়তান! আমার মেয়ের এতো ভালো বিয়েটা সে ভেঙে দিতে চাইছিলো! আর তুমি তার পক্ষ নিয়ে কথা বলছো। তোমার বোন যেমন খারাপ, তুমিও তেমন খারাপ।’ গয়নার বাক্স
বাবা কিংবা ফুফু তারা কেউই আর এ নিয়ে একটা কথাও বললেন না। বিয়ের পর প্রথম একটা মাস খুব ভালোই কাটলো ওখানে।কি সুন্দর বাড়ি।এতো বড় বড় ঘর। কারুকার্য।বাগান।যেন পুরনো জমিদার বাড়ি। তাও শহরে!
সমস্যাটা হলো এক মাস পর। আমার শাশুড়ি আমায় একদিন বললেন, ‘বউমা, গহনা গুলো ব্যবহার করলে তো মলিন হয়ে যাবে। এইগুলো খুলে কোথাও রেখে দাও। পরে বাড়িতে গেস্ট আসলে বা কোথাও বেড়াতে গেলে পরে নিলেই হবে।’ শাশুড়ির কথামতো সবগুলো গহনা আলমারিতে রেখে দিলাম আমি।
এরপর শাশুড়ি আমার হাতে একটা চাবি দিলেন। বললেন এটা লুকিয়ে রাখো। আলমারির চাবি আজ থেকে তোমার হাতে থাকুক।তুমিই এর মালিক। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলাম। সেদিন মাগরিবের নামাজের পর দু’ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে শুকরিয়া আদায় করলাম আল্লাহর দরবারে। আমার শাশুড়ির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করলাম।
এর ঠিক কদিন পরেই অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটলো। সেদিন বাসায় কেউ নাই। সবাই বাইরে। শুধু আমি বাসায়। বিকেল বেলা একজন মাঝবয়সী মেয়ে লোক এসে কলিং বেল চাপলো। দরজা খুলে বাইরে এসে চিনতে না পেরে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আপনি কে?’
মেয়ে লোকটি খুব ভালো ভাবে আমায় দেখে নিয়ে বললো,’ তুমি কে?’
আমি আমার পরিচয় দিলাম। বললাম,’ আমি এ বাড়ির বউ। আমার বরের নাম তপু।’
মেয়ে লোকটি মুখ বেজার করে বললো,’ তোমার শাশুড়ি কই?’
আমি বললাম,’ উনার বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছেন।’
মেয়ে লোকটি তখন বললো,’ উনি আসলে বলবা বাসা ভাড়া দেয়ার ডেটটা পাঁচদিন আগেই শেষ হয়েছে। ভাড়াটা যেন কালকের মধ্যে আমার বাসায় গিয়ে দিয়ে আসে। ‘
আমি অবাক হলাম। বললাম,’ কোন বাসার ভাড়া দেয়ার কথা বলছেন?’
মেয়ে লোকটি বললো ,’ কোন বাসা মানে? যে বাসায় দাঁড়িয়ে আছো এই বাসায়। বাসায় থাকবা ভাড়া দিবা না? ‘বলে চলে গেল।
এই বিষয়টা আমায় একেবারে চমকে দিলো।
এটা কিভাবে হতে পারে?
আমি তো জানি এই বাসার মালিক তপুরা নিজেই। কিন্তু এই মেয়ে লোকটি এসে এসব কি বলে গেল? গয়নার বাক্স
তপু বাসায় ফিরলো সন্ধ্যা বেলায়। তখন তাকে সব খুলে বললাম। সে শুনে হাসলো। বললো,’ এই মহিলা ঘোর পাগল! প্রতি মাসেই একবার আমাদের বাসায় আসে। এসে বলে তাকে বাসা ভাড়া দিতে। এই বাসা নাকি তার।কতো বড় পাগল চিন্তা করো।’
আমি হাসলাম। এই মহিলা তবে পাগল।আর আমি কি না কি ভেবে বসে ছিলাম।
কিন্তু এর কদিন পর আরো অদ্ভুত ঘটনা টা ঘটলো।
হঠাৎ করেই ঠিক করলাম বাড়ি যাবো। যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যখন আলমারি খুললাম গহনা গুলো বের করার জন্য তখন দেখলাম গহনা গুলো আলমারিতে নাই। অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। নাই মানে একেবারেই নাই। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন লাভ হয়নি। একেবারে লাপাত্তা। এতো গুলো গহনা। কয়েক লাখ টাকার জিনিস। এখন কি উপায় হবে?
আমি এক রকম চিৎকার করে উঠলাম। বললাম,’ আমার গহনা কোথায়? কোথায় আমার গয়নার বাক্স? ‘
আমার শাশুড়ি শুনে দৌড়ে ছুটে এলেন। তার পেছনে তপু।
এসে বললো,’ কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেন?’
আমি কেঁদেই ফেললাম। বললাম ,’ গহনা গুলো নাই মা। কোথাও নাই। খুঁজে পাইনি।’
আমার শাশুড়ি বললেন,’ কি বলো এসব? ভালো করে খুঁজে দেখো। গয়নার কি হাত পা আছে যে আলমাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে কোথাও চলে যাবে!’
আমি এরপর খুব করে খুঁজলাম। আলমাড়ি থেকে একটা একটা করে জিনিস বের করে খুঁজে দেখলাম। কোথাও গয়নার বাক্স নেই!
কি হলো তবে এগুলো?
আমি আমার শাশুড়িকে আবার বললাম,’ মা, গয়না নাই। ওখানে গয়না নাই।’
শাশুড়ি মা এবার বললেন,’ তাহলে তুমি গয়না গুলো তোমার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছো।আর এখন নাটক করছো। ‘
আমি কেঁদেই ফেললাম। বললাম,’ এসব কি বলছেন আপনি মা? আমি কি এমন মেয়ে? আমি কেন এগুলো বাবার বাড়ি পাঠাবো বলেন? আমার কি লাভ এতে? ‘
আমার শাশুড়ি আমার কথা কানে তুললেন না। তিনি মুখ বেজার করে বললেন,’ গয়না গুলো কি বাপের বাড়িতে আছে নাকি বিক্রি করে দিয়েছো আগে তা বলো?’
ততোক্ষণে তপুও ঘরে ফিরেছে। সে এসে তার মাকে বললো,’ কি হয়েছে মা? কি নিয়ে কথা হচ্ছে?’
তার মা তার কাছে সব খুলে বললেন। বললেন, গয়না আমিই চুরি করেছি।চুরি করে বাপের বাড়ি নিয়ে রেখে দিয়েছি অথবা বিক্রি করে টাকা বাবাকে দিয়ে দিয়েছি।আমি একটা চোর।এসব কিছুই বললেন।
আমি ভেবেছিলাম তপু অন্তত এই কথা কানে নিবে না। বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে তপুও বললো,’ জুঁই, গয়না গুলো তোমারই থাকতো সারা জীবন। এরপরেও তুমি এগুলো সরিয়ে ফেলার লোভ সামলাতে পারলে না ! তুমি এতো টা নীচ জুঁই! ছিঃ! ‘
আমি ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।কি এক মিথ্যে অভিযোগ আমার উপর ওরা চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমি বুঝতেও পারছি না এই আলমারি থেকে গয়নার বাক্স কোথায় গেল? কিভাবে উধাও হলো।
আমি কাঁদছি দেখে আমার শাশুড়ি এসে রাগের গলায় আমায় বললেন,’ বাহানা করে লাভ হবে না মেয়ে! এখানে পঁচিশ লাখ টাকার গয়না ছিল। তুমি তিনদিনের মধ্যে সবগুলো গয়না ফিরিয়ে দিবে নয়তো পঁচিশ লাখ টাকা বাপের বাড়ি থেকে এনে দিবে।এটাই আমার ফাইনাল কথা।’ গয়নার বাক্স
সেদিন রাতেই তপুর কাছে আমি বললাম, তপু , আল্লাহ সাক্ষী, আমি এরকম কিছু করিনি। গহনার কি হলো, এগুলো কোথায় গেল এসবের কিছুই আমি জানি না।মা মিছেমিছি আমায় সন্দেহ করছেন।আমি যদি এইগুলো চুরি করে থাকি তবে যেন আমার মরণ হয়।’
তপু রাতে আমায় এই বিষয়ে কিছু বলেনি। শুধু বললো, ‘ অনেক রাত হয়েছে।ঘুমাও।কাল সকালে দেখি এটা কিভাবে সমাধান করা যায়।’
আমি মনে বড় আশা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। ভাবলাম তপু এটার সমাধান করবে। তার মাকে বোঝাবে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে তপুর অন্য রূপটা আবিষ্কার করলাম। সকাল বেলা তপু তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো,’ মা, জুঁই আমার কাছে রাতে স্বীকার করেছে যে গয়না সেই চুরি করে তার বাবার মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে।বাইশ লাখ টাকা নাকি বিক্রি করেছে। সে বললো টাকা তার বাবার কাছেই আছে। কদিনের মধ্যে সেই টাকা এনে দিবে।টাকা এনে দিলে তুমি তাকে ক্ষমা করবে তো? ‘
তার মা কোন কথা বললো না।চুপ করে ওখান থেকে চলে গেল।
তপুর এমন বিকৃত আচরণ আমায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। মানুষ এরকম হয় কি করে? এমন ভয়াবহ রকমের চক্রান্ত মানুষ সাজায় কি করে?
এর মানে বিয়ের আগে থেকেই তাদের একটা পরিকল্পনা ছিল।তারা জেনেবুঝেই কাজটা করেছে। তারা ভেবেছে আমার বাবার যেহেতু আমি একমাত্র মেয়ে।আর কোন ভাই- বোন আমার নাই।সহায় সম্বলও আছে বাবার। আমায় বিয়ে করলে তারা একটা গেইম খেলতে পারবে। বিয়ের আগেই হয়তো গহনা চুরির পরিকল্পনটা করে রেখেছিল। একটা তালার তিনটা চাবি থাকে। আমার হাতে একটা চাবি দিয়েছিল। বাকি দুটো চাবি আমার শাশুড়ির হাতেই ছিল। তাহলে তিনিই গয়না গুলো সরিয়েছেন এখান থেকে। এরপর আমার উপর দোষটা চাপিয়ে দিয়েছেন। তাহলে কি তাদের আসল উদ্দেশ্য এমন একটা চক্রান্ত করে আমার বাবার থেকে বড় অঙ্কের একটা টাকা আদায় করে নেওয়া?
তবে কি ধরেই নিবো আমার মেজো ফুফুর কথাই ঠিক ছিল? গয়নার বাক্স
সেদিনই আমি বাবার বাড়ি এসে পড়তে চাইলাম। কিন্তু আমার শাশুড়ি ওখান থেকে কিছুতেই আসতে দিবে না। তিনি সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,’ এক পাও নড়তে পারবা না এইখান থেকে। আগে তোমার বাপকে টাকা নিয়ে আসতে বলো। পঁচিশ লাখ টাকা।এক টাকা কম আনলেও হবে না।যদি টাকা না নিয়ে আসে তবে তোমার গ্রামে গিয়ে গ্রামের সব মানুষ নিয়ে সালিশ করবো। সবার সামনে বলবো তুমি এক বাক্স গহনা চুরি করেছো আমার। পঁচিশ লাখ টাকার গহনা। তখন টের পাবা কতো ধানে কতো চাল হয় মেয়ে!’
কথাগুলো বলে তিনি এমন ভাব করলেন যেন সত্যি সত্যিই উনার গহনা আমি চুরি করেছি।
আমার মেজাজ তখন খুব বিগড়ে গেল।আর সহ্য হচ্ছে না কিছুতেই।আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,’ আপনারা এই মিথ্যে চক্রান্ত করে আমার কিছুই করতে পারবেন না!সত্যি বলতে একটা চুলও আমার ছিঁড়তে পারবেন না! ‘
তপু এখানেই ছিল। সে বললো,’ আচ্ছা দেখা যাবে আমরা কি করতে পারি আর কি করতে পারি না! সময় আসুক। এখন যা লাফালাফি করার তা তুমি করে নাও।’
সেদিন সন্ধ্যার পরেই তপু একটা মাঝবয়সী লোক সাথে করে নিয়ে বাসায় এলো। লোকটি স্বর্ণকার। লোকটিকে দেখিয়ে তপু আমায় জিজ্ঞেস করলো,’ এই লোককে তুমি চেনো?’
আমি বললাম,’ না চিনি না। উনাকে আমি চিনবো কি করে?’
আমি সত্যিই এই লোককে চিনি না। কখনো দেখিওনি। কিন্তু তপু কেমন করে যেন হাসলো। তারপর বললো,’ কিন্তু এই লোক তো তোমায় ভালো করেই চেনে জুঁই! কি আপনি চিনেন না জুঁইকে?’
মাঝবয়সী লোকটি তার জামার হাতা দিয়ে নাকের সর্দি মুছে নিয়ে বললো,’ জ্বি চিনি।উনারে আমি চিনি।’
তপু বললো,’ কিভাবে চেনেন জুঁইকে?’
লোকটি বললো,’ গত সপ্তাহে উনি আমার কাছে গেছিলেন।’
আমি অবাক হলাম।এসব কি বলছে? আমি তো বাসা থেকেই কখনো বের হইনি!গত সপ্তাহেও না, এর অগের সপ্তাহেও না। গয়নার বাক্স
আমি গলার সবটা জোর দিয়ে বললাম,’ আপনি এরকম মিথ্যে বলছেন কেন? আমি তো বাসার গেটের বাইরেই কখনো যাই না, তাহলে আপনার কাছে গেলাম কি করে?’
লোকটি বললো,’ ঈশ্বরের দিব্যি! আমি মিথ্যে বললে যেন আমার ভাগ্যে নরক জুটে।’
তারপর তপু লোকটিকে আবার জিজ্ঞেস করলো,’ আপনার কাছে জুঁই কেন গিয়েছিল?’
লোকটি বললো,’ স্বর্ণের দরদাম করতে।এক বাক্স গহনা নিয়ে এসেছিল। আমি দাম বলে দিয়েছিলাম।’
তপু বললো,’ কতো দাম বলে দিয়েছিলেন?’
লোকটি বললো,’স্বর্ণটা ভালো জাতের।পোক্ত। বলেছিলাম, পঁচিশ- ত্রিশ লাখের মতো দাম হবে।’ ভালো জাতের।পোক্ত। বলেছিলাম, পঁচিশ- ত্রিশ লাখের মতো দাম হবে।’
তপু বললো,’ আপনার কাছে কি সে স্বর্ণ বিক্রি করতে চেয়েছিল?’
লোকটি খানিক সময় চুপ করে রইলো। তারপর বললো,’ চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাখিনি। আমার কেমন সন্দেহ হলো।এক বাক্স স্বর্ণ শুধুমাত্র একটা মেয়ে বিক্রি করতে আসবে কেন? তার সঙ্গে আর কেউ নাই কেন? তাছাড়া সে এগুলো বিক্রি করতে তাড়াহুড়োও করছিলো। তাই তাকে বললাম, আমার কেনার সামর্থ্য নাই।অন্য কোথাও গিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন!’
তপু হাসলো আবার। তারপর বললো,’ মারাত্মক চোর। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
আমি ওর দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। কিন্তু সে এসবের পাত্তা না দিয়ে বললো,’ তুমি তো দেখলাম নামাজ পড়ো।আজ সকালেও কুরআন তেলাওয়াত করলা। কিন্তু তোমার চরিত্র এমন কেন? নিজের স্বামীর ঘর থেকে কেউ চুরি করে? মানুষ এসব শুনলে তোমার আগে আমার নিজের গলায়ই দড়ি দিতে হবে!একটা চোর বিয়ে করে এনেছি।’
আমি ওর দিকে চোখ লাল করে তাকালাম। তারপর কিছু বলতে গিয়েও কেন জানি সাহস করতে পারলাম না। ভীষণ ভয় লাগছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি যদি ওদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করি, তর্ক ধরি তবে ওরা আরো নানান ষড়যন্ত্র করবে। আমার কোন ক্ষতি করে বসবে।
এরপর মাকে ফোন করলাম আমি। ফোন করে সব খুলে বললাম।মা শুনে কথা বলতে পারছে না। তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে।আমি বললাম, ‘বাবার কাছে ফোন দেও। তার সঙ্গে পরামর্শ করবো।’
মা এবার কথা বললেন। বললেন,’ না না। সাবধান।তোর বাবার কাছে কিছুতেই এসব বলা যাবে না। তাকে এসব জানানো যাবে না!’
আমি বললাম,’ কেন জানানো যাবে না? বাবাকে না বললে কাকে বলবো আমি? কে সমাধান করে দিবে এই সমস্যা? আমি এখানে কি অবস্থায় আছি এখানে তুমি তা বুঝতে পারছো!’ গয়নার বাক্স
মা বললেন,’ তোর বাপ মাথা মোটা লোক। তার শরীর ভর্তি খালি রাগ।এটা শুনলে দেখবি আজকেই পুলিশ নিয়ে ওখানে যাবে। তখন কি উপায় হবে? তোর সংসার টিকবে? মানুষ শুনে কি বলবে? এই যে সবাই জানে তোর এতো বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে। মানুষকে গলা বড় করে কতো কথা বলেছি।বাইরের লোকেরা এখন এসব শুনলে কি উপায় হবে বল? ‘
আমি রাগে বললাম,’ শুধু তোমার জন্য মা! তুমি বড় লোভী মানুষ।মেজো ফুফু বাঁধা দিয়েছিলেন। তুমি তা কানেই তুলো নি।ফুফুকে সবার সামনে লজ্জা দিয়েছিলে! কাঁদিয়েছিলে তাকে।আজ দেখো এর ফল কিভাবে আমি পাচ্ছি! ‘
মা বললেন,’ পেছনের কথা রাখ। আমার যা গয়নাগাটি আর জমানো টাকা আছে তা নিয়ে শিগগির আসবো আমি। এসে ওদের এগুলো দিয়ে আপাতত মুখটা বন্ধ করবো।তুই চিন্তা করিস না মা!’
মায়ের কথা শুনে আমার গায়ে আগুন ধরে গেল যেন!
আমি বললাম,’ তুমি এতো নির্বোধ কেন মা? তুমি কি বুঝতে পারছো না এরা ভয়াবহ রকমের খারাপ মানুষ! তুমি ওদের জন্য স্বর্ণ আর টাকা নিয়ে আসবে কেন? এতে লাভ কি হবে?’
মা আমায় ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে রাখলেন। তারপর বললেন,’ তুই চুপচাপ থাক।তোর শাশুড়ি আর জামাইয়ের সঙ্গে আমিই ফোনে কথা বলবো।যা করার সব আমি নিজেই করবো।তোর কিচ্ছু করতে হবে না।’
আমি না করলাম বার বার মাকে। কিন্তু আমার কথা কানেই তুলেন নি মা। তিনি ফোন কেটে দিলেন।
আমি কি করবো না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।মা সব সময়ই নিজের ইচ্ছায় সবকিছু করেন। তার এইসব খামখেয়ালিপনা আচরণের জন্য বার বার আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে।এবারেও পড়তে হবে।আমি জানি, মা গয়না আর টাকা এনে দিলে ওরা আপাতত কয়েকটা দিন চুপ থাকবে। কিন্তু এরপর আবার নতুন একটা ষড়যন্ত্র করবে।এটাই ওদের কাজ। এরচেয়ে আমার উচিৎ হবে গোপনে খবর নিয়ে দেখা তপুর আসলে কোনো এজেন্সি আছে কি না। এজেন্সি থেকে থাকলে আর ছ লাখ টাকা করে তার ইনকাম থাকলে এরকম করবে কেন সে? গয়নার বাক্স
তাছাড়া ওইদিন যে একটা মহিলা এসে বললো, বাসা ওই মহিলার। বাসা ভাড়ার টাকা নিতে এলো। তবে কি ওই মহিলার কথাই সত্যি?
তপুরা কি আসলেই ঠক প্রকৃতির লোক?
ওদের পেশাই এটা?
কিন্তু এসব খবর কিভাবে নিবো আমি?
কার মাধ্যমে নিবো?
এসব নিয়ে চিন্তা করে কোন কূল পেলাম না। রাতে তপু বাসায় ফিরে বললো,’ তোমার মা আপাতত কিছু টাকা দিচ্ছে। কিন্তু তুমি ভেবো না এই টাকা পেয়ে আমি সব ভুলে যাবো! পঁচিশ লাখ মানে গুনে গুনে পঁচিশ লাখ।দশ টাকা কম হলেও আমি মানবো না।সে একেবারেই দাও আর কিস্তি কিস্তি করেই দাও ।’
আমি বললাম,’ এভাবে আমার উপর মিথ্যে অভিযোগ চাপিয়ে টাকা নিচ্ছো কেন? এরচেয়ে সোজা বলো যৌতুক দিতে হবে।নাকি এই সাহসটাও নাই!’
রাগেই বললাম কথাটা।
তপু বিছানায় শুয়ে ছিল। আমার কথাটা শুনে সে বিছানা থেকে উঠে আমার কাছে এসে আমার গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ বেয়াদবি কম করবা! যৌতুক নিবো কেন আমরা? আমাদের কোন কিছুর অভাব আছে নাকি? তুমি চুরি করেছো। তোমার চুরি করা জিনিস তুমি ফেরত দিবে। এখানে যৌতুক এলো কোথা থেকে?’
আমি আর কিছুই বললাম না তখন।চুপ করে রইলাম। ভাবলাম এখন এসব নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি কিংবা রাগারাগী করে কোন ফল হবে না। বরং চুপচাপ থেকে চেষ্টা করে যেতে হবে কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়!
আমি সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না।ঘুম আসছে না চোখে কিছুতেই। ফেসবুকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে একটা সময় একটা গ্রুপের একটা পোস্ট দেখে চমকে উঠলাম। পোস্ট করেছে একটা মেয়ে। মোহনা নাম মেয়েটির। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো সেই পোস্টের নিচে যে ছবি সেই ছবিটা তপুর। গয়নার বাক্স
পোস্টটিতে লিখা আছে –
এই লোকটিকে কেউ ধরিয়ে দিতে পারবেন? লোকটির নাম মোহিত। সে এস আই পরিচয় দিয়ে আমায় বিয়ে করেছিল দু বছর আগে। বিয়ের পর তার মায়ের ক্যান্সার হয়েছে এবং মাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে এই কথা বলে আমার বাবার থেকে পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে নেয়।টাকা নেয়ার পর সে একেবারে উধাও হয়ে যায়।তার ফোন নম্বর বন্ধ।যে বাসায় আমায় নিয়ে সে থাকতো আমরা জানতাম এটা তার নিজস্ব বাসা। কিন্তু ও চলে যাবার পর জানলাম, এই বাসা তার না।সে এখানে ভাড়া থাকতো।আপনারা দয়া করে এই ভন্ড প্রতারককে ধরিয়ে দিতে পারবেন?
ফেসবুকে করা ওই পোস্টের নিচে একটা বড়সড়ো কমেন্ট করেছে আরেকটি মেয়ে। মেয়েটির নাম নাজলা। সে লিখেছে, সেও এই লোককে খুঁজছে। তাকেও নাকি তপু নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর তার সঙ্গে মাস খানেক সংসার করেছিল । ওখানে তপু তার নাম বলেছিল আদনান।
এই মেয়েটির বাবা স্বর্ণের তৈরি গহনার ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দোকানে এক ধনাঢ্য লোক তার ছেলের বিয়ের জন্য অনেক পদের গহনার অর্ডার করেছিল।তপু রাতে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শ্বশুরের পাঞ্জাবির পকেট থেকে দোকানের চাবি নিয়ে গিয়ে দোকান খুলে ওখানে তৈরি করে রাখা সব গহনা চুরি করে পালিয়ে যায় তপু। তারপর থেকেই মেয়েটি এবং তার পরিবার প্রাণপণে খুঁজছে তপুকে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
আমি তখনই সব বুঝে ফেলেছিলাম।তপু আসলে কে? ওর পেশা কি, সবকিছু সম্পর্কেই।
তখনই আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।মনে মনে ঠিক করি, যেভাবেই হোক ওকে ওর উপযুক্ত পাওনা আমি বুঝিয়ে দিবো। কিন্তু কিভাবে তপুকে তার উচিৎ শিক্ষাটা পাইয়ে দিবো তাই ভাবতে থাকি। তবে এখানে সবচেয়ে বড় কাঁটা আমার নিজের মা। আমার মা একে তো লোভী ধরনের মহিলা। এছাড়া তার উপস্থিত বিবেক বুদ্ধিও কম। এবার যে তথ্য আমি ঘাঁটাঘাঁটি করে পেয়েছি এটা যদি মা জানে তাহলে মা কি না কি করে বসে কে জানে!
যদি তপুকে ফোন করে বকাঝকা শুরু করে তবে সর্বনাশ হবে।তপু লোক সুবিধার না। ভীষণ খারাপ লোক এটা তো বুঝাই যাচ্ছে।দেখা যাবে নিজেকে বাঁচাতে সে আমায় মেরে লাশ করে ফেলে রেখে এখান থেকে উধাও হয়ে যাবে। গয়নার বাক্স
কিন্তু মাকে তো যে করেই হোক থামাতেই হবে। কিন্তু থামাবো কি করে?
ভাবলাম যা করার সকাল বেলা তপু বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে করতে হবে।এর আগে কিছুই করা যাবে না।তপু জেনে ফেললেই তো সর্বনাশ!
কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো তপুকে নিয়ে মোহনা নামের মেয়েটি যে পোস্ট করেছে সেই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।ভাইরাল পোস্ট তো সবার কাছেই মুহূর্তে পৌঁছে যায়। তপু তো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নিবে। ফেসবুকে যাবে। তখন যদি ওর সামনে এই পোস্ট আসে তবেই তো সাবধান হয়ে যাবে সে! হয়তো আমায় এখানে ফেলে রেখেই ও পালিয়ে যাবে।আমি ভেবেই পাচ্ছি না কিভাবে আমি তপুকে ধরিয়ে দিবো!
ও একবার হাত থেকে ফসকে গেলে আর কিছুতেই ওকে পাওয়া যাবে না।
রাতেই শুয়ে থেকে ভয়ে ভয়ে মোহনা নামের মেয়েটিকে মেসেজ করি আমি।লিখি,’ আপনি যে লোকটিকে খুঁজছেন সেই লোক এখন আমার কাছেই আছে। আমার বর্তমান স্বামী সে। আপনি মেসেজ দেখা মাত্রই আমায় রিপ্লে দিন।দেরি হলে ও পালিয়ে যাবে। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কিছুতেই।’
ঠিক এই মেসেজটিই আবার নাজলা নামের মেয়েটিকেও করলাম আমি।
আধ ঘন্টা চলে গেলেও মোহনা নামের মেয়েটি আমার মেসেজ সিন করেনি। হয়তো তার ওখানে অনেক মেসেজ আসছে বলে আমার মেসেজ সিন করতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু নাজলা নামের মেয়েটি মুহূর্তের মধ্যে আমার মেসেজ সিন করলো। সে সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লে দিয়ে লিখলো, ‘আপনার ঠিকানা বলুন। কোথায় আছেন আপনি?’
আমি ঠিকানা দেবার আগে তপুর সঙ্গে তোলা আমার তিনটা কাপল পিক তাকে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর নাজলাকে লিখলাম, ‘ এই যে দেখুন আমার কাছে যে ওই লোক আছে এর প্রমাণ। এবার আপনি সত্যিই ওর স্ত্রী ছিলেন কি না এর প্রমাণ দিন। আপনাদের কাপল পিক দিন।’
মেয়েটি মিনিট পাঁচের পরেই তপুর সঙ্গে তোলা তার কাপল পিক পাঠিয়ে দিলো।দেখেই বোঝা যায় ইডিট নয়, সত্যি সত্যিই একসাথে তোলা ছবি।
আমি তাকে বললাম,’ আচ্ছা বলুন তো আপনাদের থেকে যে সে গহনা চুরি করেছে ওখানে কতো টাকার গহনা ছিল?’
নাজলা বললো,’ পঁচিশ লাখ টাকার।’
আমি বুঝতে পারলাম, নাজলা প্রতারক কেউ না।সে সত্যিই বলছে।আমি তাকে আগেই জিজ্ঞেস করে নিলাম, ‘আপনার ঠিকানা বলুন তো। কোথায় আছেন আপনি?’
তার এখানে এসে পৌঁছাতে কতোক্ষণ সময় লাগবে এটা অনুমান করার জন্যই আগে ভাগে তার ঠিকানা জিজ্ঞেস করে নিলাম।
নাজলা বললো, ‘ শেরপুরে আছি।’
আমি বললাম,’ আমি তো নেত্রকোনায়। তাহলে তো খুব একটা দূরে না। আপনি কাল সকালের আগেই এসে নেত্রকোনায় পৌঁছাবেন। একটা কার ভাড়া করে নিন। সঙ্গে বেশি করে লোক নিয়ে আসুন। নয়তো সব হারাবেন।ও সকাল হলেই পালিয়ে যাবে। তাছাড়া আপনার সব গহনা তার কাছে এখনও আছে।’
এরপর আমি আমার নম্বর দিয়ে দিলাম নাজলাকে। আমার বাসা কোথায়, কোনদিকে, কিভাবে আসতে হবে এক এক করে সব মেসেজেই লিখে দিলাম।
ওর সঙ্গে কথা শেষ করার খানিক পরেই মোহনা আমার মেসেজ সিন করলো। তারপর মোহনা লিখলো, ‘আপনি কি সত্যি বলছেন বোন? শতো শতো মানুষ আমায় মেসেজ করছে।ওরা বলছে আমি যার ছবি পোস্ট করেছি তাদের কাছে ও আছে।তারা ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে। আমার কাছে তারা টাকা দাবি করছে।কেউ দু লাখ।কেউ এক লাখ।কেউ আরো বেশি। এই জন্য আর কাউকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।মনে হচ্ছে সবাই মিথ্যে বলছে।’
আমি বললাম,’ ওদের কাছে কোন প্রমাণ চেয়েছেন? মানে আপনি যাকে নিয়ে পোস্ট করেছেন তার কোন ছবি আপনাকে দেখাতে বলেছেন?’
মোহনা বললো,’ না। বলিনি।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই তিনটি ছবি অর্থাৎ নাজলাকে যে ছবিগুলো পাঠিয়েছিলাম মোহনাকেও সেই ছবিগুলোই পাঠিয়ে দিলাম। তারপর লিখলাম, ‘এবার আমায় বিশ্বাস হচ্ছে তো? বিশ্বাস না হলে আর এক মিনিট ওয়েট করুন। তারপর দেখুন বিশ্বাস হয় কি না।’
বলে ফোনের ডিসপ্লের আলো দিয়ে আমি ভালো করে দেখে নিলাম তপু ঘুমে কি না।ও গভীর ঘুমে আছে এটা নিশ্চিত হবার পর ডিম লাইটের মৃদু আলোতেই মোহনাকে ভিডিও কল দিলাম।ও রিসিভ করলে এখান থেকে কোন কথা না বলে শুয়ে থাকা তপুকে দেখিয়ে দিলাম ভালো করে। তারপর কল কেটে দিয়ে লিখলাম, ‘এখন বিশ্বাস হয়েছে তো?’
মোহনা তাড়াহুড়ো করে রিপ্লে দিলো। সে বললো,’ আপনার পায়ে পড়ি বোন।এটাই সেই লোক। সেই প্রতারক। আপনি ওকে ধরিয়ে দিন প্লিজ। আপনার কাছে আমার আকূল আবেদন বোন। বিনিময়ে কতো টাকা চান বলুন। আমি টাকা দিবো। যতো টাকা চান ততোই দিবো।’
আমি বললাম, ‘ আমি কোন বিনিময় চাই না।আমি নিজেও ওর শাস্তি চাই। আমিও ঠকেছি।ওর প্রতারণার শিকার আমিও হয়েছি। আমিও ওর উপযুক্ত শাস্তি চাই। আপনার হাতে আমি ওকে তুলে দিবো, কিন্তু সমস্যা হলো কাল সকাল হতেই ও যেভাবেই হোক জেনে ফেলবে আপনি ওকে নিয়ে পোস্ট করেছেন। যেহেতু আপনার পোস্ট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাই এটা সবার কাছেই পৌঁছে যাবে।ওর কাছেই নিশ্চয় যাবে।আর ও এটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যাবে। তাকে আর কিছুতেই ধরা যাবে না।’
মোহনা বললো,’ আপনি কোন জায়গায় থাকেন বোন? ‘
আমি বললাম,’ নেত্রকোনায়।’
মোহনা বললো,’ আমি টাঙ্গাইল থাকি। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। ওখান থেকে আমি রাত শেষ হবার পূর্বেই এসে পৌঁছে যাবো। যেভাবেই হোক এসে পৌঁছাবোই।’
আমি বললাম,’ হ্যা তাই করুন। কিন্তু কিছুতেই একা আসবেন না।বেশি করে লোক নিয়ে আসুন সঙ্গে।পারলে দ্রুত গতির কোন গাড়ি নিয়ে নিন।’
মোহনা বললো,’ আচ্ছা বোন।’
তাকেও আমি আমার পুরো ঠিকানা দিয়ে দিলাম।যেন খুব সহজেই এখানে এসে পৌঁছে যেতে পারে। গয়নার বাক্স
এরপর খানিকটা সময় চুপচাপ শুয়ে রইলাম। নড়াচড়া করছি না। নড়াচড়া করলে যদি তপু ঘুম থেকে উঠে যায় তাই। কিন্তু ফোনের ডিসপ্লের আলোর জন্যও সমস্যা হতে পারে।ও যদি একবার দেখে এতো রাতে আমি ফোন ব্যবহার করছি, এখনও ঘুমাইনি তবেই ঝামেলা করবে।ও তো আর সহজ সরল লোক না।সব বুঝে ফেলবে মুহূর্তে। এই ভয়ে এই গরমের মধ্যেও কাঁথা টেনে সারা শরীর ঢেকে দিলাম।
এরপর বাবাকে একটানা কল দিতে থাকলাম।আমি জানি এতো রাতে বাবা জেগে নেই। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু বার বার কল দিলে ফোনের রিংটোন শুনে বাবা এক সময় জেগে উঠবেই।বাবা জেগে উঠে ফোন রিসিভ করলে আমি এপাশ থেকে কিছুতেই কথা বলবো না। কথা বললে তপু টের পেয়ে যাবে। তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।তাই আমি কথা না বলে সরাসরি ফোন কেটে দিবো। তারপর মেসেজ করে যা বলার তা বলে দিবো।
বাবাকে কয়েক বার কল দিলাম। ফোন রিসিভ করলো না বাবা। এরপর এক সময় রিসিভ করতেই আমি ফোন কেটে দিলাম এপাশ থেকে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে বাবার ফোনে মেসেজ টা পাঠিয়ে দিলাম।মেসেজে আমি লিখলাম, ‘ বাবা, আমি বড় বিপদে আছি। বিরাট বড় বিপদে। সকাল বেলা তুমি চাচাদের নিয়ে আমার শশুর বাড়ির সামনে থেকো। পারলে এক্ষুনি বের হয়ে পড়ো তোমরা।মনে রাখবে ভোর হবার আগেই এখানে এসে উপস্থিত হতে হবে তোমাদের।’ গয়নার বাক্স
বাবাকে মেসেজ করে ফোনের ডাটা অফ করে বালিশের একপাশে রেখে দিলাম ফোন। তারপর শরীর থেকে কাঁথা নামিয়ে একপাশে রেখে দিলাম। কিন্তু এরমধ্যে সমস্যা যা হবার তাই হয়ে গেল। হঠাৎ করেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। তপু এমনিতেই গরম সহ্য করতে পারে না। ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ায় মুহূর্তে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।ঘুম ভাঙার পর পরই ওর হাতে ওর ফোন তুলে নিলো।
লেখকঃ অনন্য শফিক
গয়নার বাক্স এর মতো আরও গল্প পড়তেঃ ভিজিট করুন
ঘর সাজাতেঃ Canvaswala || ব্যবসা বাড়াতেঃ Fixcave
Leave a Reply