রিজিক নিয়ে টেনশন

রিজিক নিয়ে টেনশন কেন? রিজিক নিয়ে বিস্তারিত

By Adivai_Admin April 29, 2025 No Comments 4 Min Read

আসমান যমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে আল্লাহ রিজিক লিখেছেন। একটা চালের দানা পৃথিবীতে রেখে আপনি বিদায় নিবেননা। এক ঢোক পানি যেটা আপনার জন্য পৃথিবীতে আছে সেটা না খাওয়া পর্যন্ত আপনি যাবেননা পৃথিবী থেকে। অস্থির হচ্ছেন কেনো? রিজিক নিয়ে টেনশন কেনো? রিজিক আল্লাহর হাতে আল্লাহ দিবে আপনাকে।

আমরা অনেকেই মনে করি রিজিক মানেই শুধু টাকা-পয়সা বা বস্তুগত সম্পদ। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিতে রিজিক শুধু অর্থ বা সম্পদ নয়—এর বিস্তৃতি অনেক গভীর ও ব্যাপক।

📖 রিজিকের প্রকৃত অর্থ

রিজিক শব্দটি আরবি “رزق” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো—যে কোনো প্রকার উপকার বা কল্যাণ যা আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

  • এটা হতে পারে খাবার, পানি, ঘুম
  • হতে পারে সুস্থতা, জ্ঞান, সময়
  • এমনকি একজন ভালো বন্ধু, সহানুভূতিশীল পরিবার, শান্ত হৃদয়—সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।

🕋 রিজিক আল্লাহর হাতে

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আল্লাহই প্রতিটি জীবের রিজিকদাতা।”
— (সূরা হূদ, আয়াত ৬)

আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, রিজিকের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। তাই দুশ্চিন্তা না করে আমাদের উচিত চেষ্টা করা ও তাঁর উপর তাওয়াক্কুল রাখা।

😔 দুশ্চিন্তা কেন করি?

রিজিক নিয়ে টেনশন করেন কেন? আমরা প্রায়শই দেখি—কারো রোজগার বেশি, কারো কম। কেউ খুব কষ্ট করে চলছে, আবার কেউ অল্প চেষ্টায় সাফল্য পাচ্ছে। তখন মনে হতে পারে, “আল্লাহ কি আমাকে কম ভালোবাসেন?”
এমন ভাবনা আসা মানবিক, কিন্তু এটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহ কাউকে ধৈর্যের মাধ্যমে, কাউকে সম্পদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন।

❤️ রিজিক শুধু ‘নেওয়া’র বিষয় না, ‘দেওয়া’রও

অনেক সময় আমরা শুধু চাই—আরো অর্থ, আরো সুযোগ, আরো সফলতা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখি না—আমরা কতটুকু দিচ্ছি?
কারো মুখে হাসি ফোটানো, একজন ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, সময় দেওয়াও এক ধরনের রিজিকের সঠিক ব্যবহার।

💡 কীভাবে রিজিক বাড়ানো যায়?

  • নিয়মিত নামাজ ও দু’আ
  • ইস্তেগফার করা (ক্ষমা প্রার্থনা)
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা
  • সদকা ও ইনসাফ করা
  • পরিশ্রম ও হালাল রুজির জন্য চেষ্টা করা

🧘‍♀️ মানসিক শান্তিও রিজিক

শান্তিপূর্ণ মন, দুশ্চিন্তাহীন জীবন—এগুলো কোনো টাকায় কেনা যায় না। অথচ এগুলোই আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান রিজিক।


রিজিক নিয়ে টেনশন নয়। রিজিক কখনো কারো হাতে নয়। চাকরি, ব্যবসা, ক্লায়েন্ট, বস—সবই মাধ্যম মাত্র। উৎস একমাত্র আল্লাহ। তাই নিজের চেষ্টা চালিয়ে যান, হালাল পথে থাকুন এবং রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে কৃতজ্ঞ হোন।

🌸 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল, বরকতময় এবং পরিপূর্ণ রিজিক দান করুন। আমিন।

রিজিক নিয়ে টেনশন? কোরআন বলেঃ

১. অতঃপর যখন জুমার নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (সূরা জুমুয়াহ, আয়াত, ১০)

২. পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই (উল্লেখ) এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) রয়েছে।’ (সূরা হুদ, আয়াত, ৬)

৩. আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত, ২২)

৪. নিশ্চয় আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি রিজিকদাতা এবং মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।’ (সুরা আয যারিয়াত, আয়াত, ৫৮)

৫. আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৫৫)

৬. নিশ্চয় তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিজিক সীমিত করে দেন। আর অবশ্যই তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং প্রত্যক্ষদর্শী।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত, ৩০)

৭. পার্থিব জীবনের ওপর কাফেরদের উন্মত্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর তারা ইমানদারদের প্রতি লক্ষ করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেজগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুজি দান করেন।’ (সূরা আল বাকারা , আয়াত, ২১২)

৮. এবং তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন যার উৎস সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। ’ (সূরা আত ত্বালাক, আয়াত, ৩)।

৯. এমন কে আছে, যে তোমাদের রিজিক দান করবে? যদি তিনি তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন?’ (সুরা মুলক, আয়াত ২১)।

১০. যদি আল্লাহ তায়ালা তার সব বান্দাদের প্রচুর রিজিক দান করতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। বরং তিনি যে পরিমাণ চান তার জন্য ততটুকুই রিজিক নাজল করেন।’ (সূরা শুয়ারা, আয়াত, ২৭)।

১১. হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হোক না কেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

১২. এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য সঙ্গে বয়ে বেড়ায় না। আল্লাহই তাদেরকে রিজিক দান করেন এবং তোমাদেরকেও। তিনিই সব কথা শোনেন, সকল কিছু জানেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬০)

১৩. আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে চান রিজিক দান করেন এবং তিনিই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ১৯)

রিজিক নিয়ে টেনশন? হাদিস বলেঃ

“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হয়” [ ইবনে মাজাহ]।

হজরত ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, আরও একটি রিজিক সম্পর্কে হাদিস হলো নবী কারিম (সাঃ) বলেন “তোমরা যদি আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করতেন। যেমনভাবে তিনি পাখিদের রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা তো সকালে খালি পেটে ক্ষুধা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়, আবার শেষ বিকেলে ভরা পেটে বাসস্থানে ফিরে আসে” [তিরমিজি, হাদিস নং – ২৩৪৪]

বিখ্যাত বুজুর্গ হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, আমি কোরআনের নব্বই জায়গায় পেয়েছি, আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেবল এক জায়গায় পেয়েছি, ‘শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখায়।’ -সূরা বাকারা: ২৬৮

রিজিক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কোরআন-হাদিসের বর্ণনা

কিছু কারণে বান্দার রিজিক তথা জীবিকা বৃদ্ধি পায়। ওইসব কারণগুলো হচ্ছে-

এক. একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর ইবাদত ও সৎকর্ম করা। -সূরা আন নাহল: ৯৭

দুই. বেশি পরিমাণে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা ও ইস্তেগফার পড়া। -সূরা নুহ: ১০-১২

তিন. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলা। -সূরা আত তালাক: ২

চার. বেশি বেশি বৈধ রিজিকের জন্যে দোয়া করা। -সূরা বাকারা: ১৮৬

পাঁচ. দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। -সূরা আত তালাক: ৩

ছয়. অসহায় দরিদ্রদের সাহায্য করা। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৬

সাত. হজ ও উমরা করা। -সুনানে তিরমিজি: ৮১০

আট. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। -সহিহ বোখারি: ২০৬৭

নয়. সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। -সুনানে আবু দাউদ: ২৬০৬

দশ. ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। -সহিহ মুসলিম: ৬৫৭

একমাত্র যে কারণে বান্দাকে রিজিক থেকে বঞ্চিত রাখা হয় তা হচ্ছে গোনাহের কাজে লিপ্ত থাকা। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯০

উল্লেখ্য হারাম উপার্জন দিয়ে গঠিত শরীরের কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না এবং ওই শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সিলসিলা সহিহাহ: ২১২

অতএব কোনো ধরনের হতাশা নয়, তাকদিরে আমাদের জন্য যতটুকু বরাদ্দ আছে, ততটুকু আমরা পাবোই, এটাই আল্লাহর ওয়াদা। আমাদের কাজ শুধু চেষ্টা করে যাওয়া। যে বিষয়ে আল্লাহ হুকুম করেছেন- তা মানা, আর যে বিষয়ে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, তা থেকে নিচেকে বাঁচিয়ে রাখা।

লিখেছেনঃ Faisal Hossan (Adi)

আরও পড়ুনঃ 100 টি AI Tools শিখলে বদলে যাবে দুনিয়া – সফলতার শুরু!

অনলাইন বিজনেসের সাপোর্ট পেতেঃ Fixcave Agency

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *