পাকিস্তান ট্যুরপাকিস্তান ট্যুর

পাকিস্তান ট্যুর এ আবিষ্কার করুন নতুন স্বপ্নের দিগন্ত

By Adivai_Admin June 6, 2024 No Comments 5 Min Read

পাকিস্তান ট্যুর এর জন্য প্রথমেই অনলাইনে পাকিস্তানের ভিসা আবেদন করতে হবে। ঘরে বসে অথবা যেকোনো কম্পিউটার দোকানের মাধ্যমে এই আবেদন করতে পারবেন। এতে খরচ হবে ২৫ ডলার । আবেদনের দেড়-দুই মাসের ভেতরেই ভিসা চলে আসবে।

অনলাইনে ভিসা আবেদনের পদ্ধতিঃ

ভিসা আবেদনের পরপরই ফ্লাইটের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে দিবেন। সিজন এবং ডেট অনুযায়ী রেট বাড়ে-কমে। ভিসা আসার পর টিকেট কনফার্ম করতে হবে। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ঘুরতে চাইলে আমরা অবশ্যই লাহোরে যাবো। কারন ইসলামাবাদ বা করাচীর ভাড়া বেশি। ঢাকা-টু-লাহোর রাউন্ড টিকেট (যাওয়া-আসা) এর দাম প্রায় ৪২-৪৫ হাজার টাকা। আপনার সুবিধামত কম খরচের একটা এয়ারলাইন্সের টিকেট বুক করে নিবেন।

এভাবে বিমান যোগে পৌছাতে হবে লাহোরে। লাহোর থেকে বাসে করে পৌছুতে হবে রাজধানী ইসলামাবাদ। লাহোর এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি বা অন্য কিছু ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন সিটি বাস স্টেশনে (ব্যান্ড রোড)। লাহোর-টু-ইসলামাবাদ রুটের যেকোনো একটা বাসে উঠে ৫ ঘন্টা জার্নি করে চলে আসবেন ইসলামাবাদ। খরচ পরবে ১ হাজার টাকার মত।

ইসলামাবাদে অনেক ক্যাটাগরির হোটেল আছে। আপনার বাজেট অনুজায়ী একটা বেছে নিয়ে ২-১ দিন থাকতে পারেন সেখানে। ইসলামাবাদ বিশ্বের ২য় সুন্দরতম রাজধানী, তাই চাইলে কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে ঘুরে দেখতে পারেন অত্যন্ত সুন্দর এবং আধুনিক এই শহরটিকে।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

কারেন্সি চেঞ্জঃ

লাহোরে এসেই প্রথমে কোনো ব্যাংক বা এয়ারপোর্টের কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে বাংলাদেশি টাকাকে রুপিতে কনভার্ট করে নেবেন। নরমালী ১০০ টাকা = ১৯০ রূপি। তবে কনভার্টের সময় কিছুটা কম দেয়া হয়।

পাকিস্তানী সিম উত্তলনঃ

পাকিস্তানে লোকেশন ট্রেকিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রয়েজন পরবে। আর সেজন্য অবস্যই পাকিস্তানী সিম লাগবে। তাই সেখানে পৌছেই সিম সংগ্রহ করতে হবে। বিদেশিরা সম্ভবত সিম ক্রয় করা ক্রিটিক্যাল, তবে একজন পরিচিত পাকিস্তানী থাকলে তার রেফারেন্সে সহজেই সিম কিনতে পারবেন।

তবে লাহোর এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশিরা সহজেই সিম উত্তোলন করতে পারে। তাই এয়ারপোর্টে থাকতেই অবস্যই সিম কিনে নিবেন। সিম কেনার ক্ষেত্রে Zong নামক সিমটি কেনার চেষ্টা করবেন। নয়তো Jazz নামক সিমটি কিনবেন। সিমের ইন্টারনেট আপনার সব কাজ ইজি করে দেবে।

প্রাথমিক থাকা/হোটেল বুক করাঃ

মুল ট্যুর শুরুর পূর্বে পাকিস্তানে গিয়ে আপনাকে ১-২ দিন লাহোর বা ইসলামাবাদে থাকতে হবে। লাহোর বা ইসলামাবাদে এক-দেড় হাজার টাকার ভেতরেই অনেক ভালো মানের হোটেল রুম পাওয়া যায়। সেগুলোতে ব্রেকফাস্টও ফ্রি পাবেন। এই রুম গুলোতে ২-৩ জন করে থাকতে পারবেন। এছাড়া দুই হাজার টাকায় ডবল বেডের রুম পাবেন, যাতে ৪-৬ থাকতে পারবেন। খুব সহজেই পছন্দমত হোটেল খুঁজে পেতে প্লে-স্টোর থেকে Booking. com এপসটি ডাউনলোড করে ফেলবেন।

অনলাইনে হোটেল বুকের পদ্ধতিঃ

আবার আপনি চাইলে বাংলাদেশে থেকেই অনলাইনে হোটেল বুক করতে পারবেন। আপনার সাথে যদি মহিলা বা শিশু থাকে, তাহলে ১-২ দিনের আগাম হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন, নতুবা দরকার নেই।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

মুল ট্যুরঃ

এবার ইসলামাবাদ থেকে শুরু হবে আপনার মুল ট্যুর। খাইবার পাখতুনখা, গিলগিট-বাল্টিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশের যেকোনো অঞ্চল ট্যুরে যেতে পারবেন এখান থেকেই।

নর্থ এরিয়া ট্যুরের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ইসলামাবাদ থেকে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে নেয়া। গিলগিট-বাল্টিস্তান এরিয়ায় ভাড়ায় চলিত গাড়ি নেই বললেই চলে। তাই ভেঙে ভেঙে ট্যুর করা পসিবল নয়।

নিজেরা গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিলে সব টেনশন শেষ। সেই সাথে পথ খুঁজে পর্যটন স্পর্ট পৌছানোর ঝামেলাও থাকেনা। আপনি জাস্ট লোকেশনের নাম বলবেন, ড্রাইভারই আপনাকে সব স্পর্টে নিয়ে যাবে।

মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পাকিস্তানে গাড়ি রেন্ট করার খরচ কম থাকে। এসময় পার-ডে ভাড়া থাকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার ভেতর। অথচ আমাদের দেশে একটা গাড়ির পার-ডে ভাড়া পরে ৪-৫ হাজার টাকা😕

এভাবে ৪-৫ জনের গ্রুপ মিলে যদি একটা গাড়ি ভাড়া নেয়, তাহলে খরচ কিন্তু অনেক কম হয়। আর ১২-১৩ জনের গ্রুপ মিলে মাইক্রো বাস ভাড়া করে ফেললে খরচ আরো অনেক কমে যাবে। অতঃএব বড় গ্রুপে যাবার চেষ্টা করবেন।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

খরচ কত হতে পারেঃ

প্রথমেই বলে রাখি, পাকিস্তানে থাকা-খাওয়া এবং অভ্যন্তরিন যাতায়ত খরচ বাংলাদেশের মতই বা এর চেয়েও কম। তাই আপনি সেখানে যত দিনই থাকুন, তাতে খরচ তেমন বাড়বে না। মুল খরচটাই হলো বিমান ভাড়া।

পাকিস্তান ট্যুরের প্রধান কিছু খরচ।

▶ পাকিস্তানী ভিসার মুল্য ৩,২০০ টাকা।
▶ ঢাকা টু লাহোর বিমান ভাড়া প্রায় ৪১-৪৫ হাজার টাকা।
▶ লাহোর টু ইসলামাবাদ (যাওয়া-আসা) বাস ভাড়া ২ হাজার টাকা।

তো এখানে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৬-৫০ হাজার টাকার মত। ধরুন পাকিস্তানে ১৫-২০ দিন অবস্থান করলে হোটেল বিল, খাবার, যাতায়ত, ঘুরাঘুরিতে খরচ করলেন আরো ১৫-২৫ হাজার টাকা। তাহলে সব মিলিয়ে টোটাল খরচ হচ্ছে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার টাকার মত।

এটা হচ্ছে সিঙ্গেল ১ জনের হিসাব। কিন্তু গ্রুপ ট্যুরে গেলে খরচ অনেক কমে যাবে। ধরুন ৪ জনের একটা গ্রুপ গেলেন। তাহলে ১ টা ডবল বেডের রুম ভাড়া নিয়েই চার জন থেকে যেতে পারবেন। কিছু যায়গায় যেতে হলে গাড়ি ভাড়া নিয়ে যেতে হয়। সেসব ক্ষেত্রে ১ জনের ভাড়াতেই চারজন ঘুরতে পারবেন৷ এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ কমে মাথাপিছু ৬০ হাজারের ভেতর চলে আসতে পারে। তাই অবস্যই গ্রুপ হিসেবে ৪-৫ জন মিলে যাবেন।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

কোথায় কোথায় ঘুরবেনঃ

নর্থ পাকিস্তানে ঘুরার জায়গার কোনো অভাব নাই। আপনি একটানা ১ বছর ধরে ঘুরলেও আপনার স্বাদ মিটবে না। তবে আমাদের যেহেতু এত ঘুরার সামর্থ নেই তাই আমরা বেছে বেছে কিছু যায়গায় ঘুরতে পারি। যেমন…..

১. সোয়াত
২. হুনজা
৩. স্কার্দু
৪. আজাদ কাশ্মীর।

এগুলো খুবই পপুলার পর্যটন অঞ্চল। তবে এগুলোকে আবার ছোটখাটো কোনো পর্যটন স্পট ভাববেন না। কারন এগুলো একেকটাই বাংলাদেশের ২-৩ টা জেলার সমান সাইজের। এগুলোর ভেতর আবার ছোট ছোট অনেক পর্যটন স্পর্ট আছে। যেমন….

সোয়াতঃ কামরাট ভ্যালি, কালাম ভ্যালি, মালুম জব্বা রিসোর্ট, মহোদন্ড লেক, কুন্ডোল লেক ইত্যাদি….

হুনজাঃ হুনজা ভ্যালি, আতাবাদ লেক, আলতিত ফোর্ট, বালতিত ফোর্ট, মাউন্ট রকাপুসি ইত্যাদি…..

স্কার্দুঃ সার্ফারাঙ্গা কোল্ড ডেজার্ট, আপার কাচুরা লেক, লোয়ার কাচুরা লেক, সাতপারা লেক, স্কার্দু সিটি ইত্যাদি….

আজাদ কাম্মীরঃ মুজাফফরাবাদ সিটি, নীলাম ভ্যালী, রাত্তি-গালি লেক, চিত্তকথা লেক, ইত্যাদি….

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

একটা কাজ করুন…. উপরোক্ত এই পর্যটন স্পর্ট গুলো সম্পর্কে ইউটিউব ভিডিও বা আমাদের গ্রুপের পোস্ট পড়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। এর ভেতর যেই স্পর্ট গুলো আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে তার একটা তালিকা বানিয়ে ফেলুন। পাকিস্তান গেলে তখন সেই তালিকা অনিজায়ী ট্যুর করবেন।

থাকা/হোটেলঃ

উপরোক্ত সবগুলো স্থানেই আবাসিক হোটেল আছে। বিশেষ করে হুনজা এবং সোয়াতে হোটেলের পরিমান বেশি। বড় হোটেল গুলোর লোকেশন ইন্টারনেটেই পাবেন, আগাম বুকও করতে পারবেন। অফ সিজনে ৮শ থেকে ১ হাজারের ভেতর ভালো রুম পেয়ে যাবেন। রুমগুলোতে ৪ জন করে থাকতে পারবেন। ট্যুর সিজনে আবার দাম বেড়ে যায়। Booking. com এর মাধ্যমে সহজেই ভালো ভালো হোটেল খুঁজে পাবেন। এখানে দামি-সস্তা সব রকমের হোটেলই পাবেন। আপনার পছন্দ/বাজেট অনুজায়ী যেকোনো একটা বেছে নেবেন।

এছাড়াও ওখানে যাবার পর কম খরচের স্থানীয় হোটেল পাবেন। এসব স্থানীয় হোটেলের লোকেশন ইন্টারনেটে নাও থাকতে পারে। এসব স্থানীয় হোটেলে ভাড়া কম হবে।

আরেকটা কাজ করা যেতে পারে। পোর্টেবল তাবু কিনে নিজেদের মত করে থাকা যেতে পারে। লোকালয় থেকে কাছে, তবে নিরিবিলি-মনুষ্যহীন স্থানে তাবু খাটাবেন। অনেক বিদেশি ট্রাভেলারকে দেখেছি পাকিস্তানে গিয়ে এই কাজ করতে। এর ফলে খাওয়ার খরচ ছাড়া আর কোনো খরচই হবেনা। তবে একাজ তখনই করবেন, যখন আপনারা ৪-৫ জনের গ্রুপ থাকবেন, আর সাথে একজন পরিচিত পাকিস্তানী নাগরিক থাকলে ভালো হবে। আর হ্যা, শীতকালে এই কাজ না করাই উচিত। ওখানকার প্রচন্ড ঠান্ডা সহ্য করা খুব কঠিন।

এছাড়া সবগুলো অঞ্চলেই পাকিস্তান সরকারের টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার আছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সহায়তা পেতে পারেন।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

কোন সময় ট্যুরে যাবেনঃ

পাকিস্তান ট্যুরের অফ সিজন হলো মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এই সময় গেলে গাড়ি ভাড়া, হোটেল ভাড়া অনেক কম হবে। তাই কম খরচে ট্যুর করতে চাইলে এই সময়টা বেছে নেবেন।

এছাড়া এমনিতেও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত, হুনজা বা স্কার্দু যাওয়া বেশ কঠিন। কারন রাস্তায় বরফ জমে থাকে। তবে শীতকালে সোয়াত ট্যুর করে মজা পাবেন। এসময় সোয়াতে আইস স্কেটিং সহ বিভিন্ন ধরনের ইউন্টার গেমিং চলে।

কিছু বাড়তি পাওয়াঃ

সোয়াত, হুনজা এবং স্কার্দু, এই তিনটি অঞ্চল মোটামোটি একই ডিরেকশনে। আর এগুলোতে যেতে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম সড়ক কারাকোরাম হাইওয়ে দিয়ে। বিশ্বাস করুন, খোলা জীপে চড়ে যখন কারাকোরাম পাড়ি দেবেন, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না।

আর হুনজায় গেলে আরো দুটো বার্তি জিনিস পাবেন। ১ম টা হলো ‘বাবুসর পাস’ বিশ্বের সবচেয়ে উচু সড়ক। যেখানে মেঘও আপনার নিচে দিয়ে বইবে। আর ২য়টি হলো ‘পাসু কোন’ যেখান গেলে মনে হবে রাস্তা বুঝি আর কখনো শেষ হবেনা, সামনের পাহাড় গুলোর কাছেও কোনোদিন পৌছানো যাবে না।

পাকিস্তান ট্যুর
Photo: Google

আর আজাদ কাশ্মীরে যেতে হয় পীর চিনসি রোড দিয়ে। এটাও কারাকোরাম হাইওয়ের চেয়ে কোনো অংশেই কম না। এখানেও মেঘের উপর দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে।

আর আপনি যদি মনে করেন পাকিস্তান ট্যুর খরুচে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে স্মরণ করুন… পাকিস্তানের সৌন্দর্য সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনের মত। আর ওই দেশগুলো ট্যুরে গেলে দুই-আড়াই লাখেরও বেশি খরচ হয়। সে তুলনায় পাকিস্তান ট্যুর অনেক সস্তা।

তো আজ এতটুকুই …. পাকিস্তান ট্যুর নিয়েআগামীতে আরো তথ্য জোগাড় করতে পারলে তা নিয়ে পোস্ট করা হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

উত্ত অঞ্চল সমূহের ম্যাপ…. এই ম্যাপে এলাকার নাম, রাস্তা-ঘাট, হেটেল, টুরিস্ট ইনফরমেশন কেন্দ্র সহ অনেককিছুর অবস্থান দেখতে পাবেন।

Copy from Adventure Pakistan group

আরও পড়ুনঃ বিদেশ ভ্রমণ এর আগে যা যা জেনে রাখা প্রয়োজন
এখানেও ভিজিট করুন

আরও পড়ুনঃ বিদেশ ভ্রমণ এর আগে যা যা জেনে রাখা প্রয়োজন
এখানে ভিজিট করুন, ঘর সাজাতেঃ Canvaswala || ব্যবসা বাড়াতেঃ Fixcave

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *